তাহলে ❝কামোওয়ালেওয়া❞ চাঁদেরই এক খন্ড?

তাহলে ❝কামোওয়ালেওয়া❞ চাঁদেরই এক খন্ড? 



যে পাথরের টুকরার কথা বলা হচ্ছে, সেটা ঠিক ‘ছোট্ট’ নয়। দৈর্ঘ্যে ১৬৫ ফুট। ২০১৬ সালে প্রথম ধরা দেয় হাওয়াইয়ের প্যান স্টার্স ১ টেলিস্কোপে। অদ্ভুত এ মহাজাগতিক বস্তুর হাওয়াইয়ান নাম ‘কামোওয়ালেওয়া’, যার অর্থ বলা যায় টলমল মহাজাগতিক বস্তু।

পাথরখণ্ডটি বেশ লাজুক। পৃথিবীর আশপাশে আবর্তিত হলেও কাছে ঘেঁষে না। এ পর্যন্ত পৃথিবীর সঙ্গে অন্তত ৯০ লাখ মাইল দূরত্ব বজায় রেখেছে। এ দূরত্ব পৃথিবী থেকে চাঁদের দূরত্বের ৩৮ গুণ। আবার সর্বোচ্চ আড়াই কোটি মাইলের বেশি দূরেও যায়নি।

দ্য নিউইয়র্ক টাইমস–এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কক্ষপথে আবর্তনের হিসাব কষে দেখা গেল পাথরখণ্ডটি প্রায় এক শতাব্দী আগে থেকে পৃথিবীকে ‘নিয়মিত অনুসরণ’ করছে। আর আগামী কয়েক শতাব্দী ধরে তা চলবে। 

তবে এই কামোওয়ালেওয়া এল কোত্থেকে? কেবল টেলিস্কোপে দেখে তা বলা মুশকিল। একে তো আকারে ছোট, তা ছাড়া যখন–তখন ছায়ায় আড়াল হওয়ার স্বভাব আছে। গত বৃহস্পতিবার কমিউনিকেশনস আর্থ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণাপত্রে সে রহস্যভেদের দাবি করেছেন একদল বিজ্ঞানী।

সূর্যের আলোয় ক্ষণিকের জন্য আলোকিত হয়েছিল কামোওয়ালেওয়া। জ্যোতির্বিদেরা সেটুকু সময়েই রহস্যভেদের চেষ্টা করেন। তাঁরা দেখলেন, চাঁদের পৃষ্ঠে পাওয়া হিমায়িত ম্যাগমাটিক উপাদানেই তৈরি সেটি।

যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব অ্যারিজোনার শিক্ষার্থী বেঞ্জামিন শার্কি এ গবেষণাপত্রের মূল লেখক। তিনি বলেন, ‘২০১৯ সালে প্রথম যখন সে তত্ত্বে পৌঁছালাম, মনে হয়েছিল আমার কোথাও ভুল হচ্ছে।’

গ্রহাণুতে সচরাচর যে ধরনের খনিজ পাওয়া যায়, সে উপাদানই কামোওয়ালেওয়াতে পাওয়া যাবে বলে মনে করা হতো। তবে নতুন পাওয়া তথ্যে দেখা যায়, সেটি চাঁদের ক্ষুদ্র একটি অংশের সদৃশ। আর সে আবিষ্কারের পর বেঞ্জামিন শার্কি একই সঙ্গে ‘উত্তেজিত এবং দ্বিধান্বিত’ হয়ে পড়েন।

গঠন এবং কক্ষপথ দেখে বলা যায়, কামোওয়ালেওয়া হয়তো চাঁদেরই একটি খণ্ড। অতীতে কোনো এক সময় হয়তো উল্কার আঘাতে চাঁদ থেকে খসে পড়েছে।

যেহেতু চাঁদেরই অংশ, তাহলে তো কামোওয়ালেওয়াকে ক্ষুদ্রাকৃতির চাঁদ বলা যায়, নাকি? ব্যাপারটা তেমন নয় বলে জানিয়েছেন ওই গবেষকেরা। মহাকর্ষজ বলের প্রভাবে চাঁদের বন্ধন পৃথিবীর সঙ্গে। একই বলে কামোওয়ালেওয়া যুক্ত সূর্যের সঙ্গে। আচমকা পৃথিবী যদি উধাও হয়ে যায়, তবে কামোওয়ালেওয়া আগের মতোই সূর্যকে ঘিরে আবর্তিত হবে। আর সে কারণেই সেটিকে কৃত্রিম উপগ্রহ বলে মনে হয়। এমন আরও চারটি মহাজাগতিক বস্তুর খবর জানেন বিজ্ঞানীরা।

২০১৭ সালের এপ্রিলে পৃথিবী যখন কামোওয়ালেওয়া এবং সূর্যের মাঝামাঝি ছিল, পাথরখণ্ডটি সে সময় উজ্জ্বল আলোয় আলোকিত হয়েছিল। অ্যারিজোনায় দুটি টেলিস্কোপে সেটির ওপর চোখে রাখেন বিজ্ঞানীরা। প্রতিফলিত আলো দেখে সেটির খনিজ উপাদান বোঝার চেষ্টা করেন তাঁরা। সিলিকেট নামের একটি উপাদান নজরে আসে তাঁদের। এ খনিজ আমাদের সৌরজগতের পাথুরে যেকোনো বস্তুতেই দেখা যায়। পরবর্তী পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, কামোওয়ালেওয়ার সিলিকেটগুলো দেখতে অনেকটা চাঁদে পাওয়া সিলিকেটের মতো। 

এটা কাকতাল হতে পারে। আর সে কারণেই গবেষণাপত্রটির লেখকেরা কামোওয়ালেওয়ার উৎপত্তির সম্ভাব্য আরও কয়েকটি তত্ত্ব পেশ করেছেন। হতে পারে সেটি একটি গ্রহাণু, যেটির গঠনে চাঁদের সঙ্গে মিলে আছে। আবার কোনো গ্রহাণু থেকে খসে পড়া খণ্ডও হতে পারে।

গবেষক দলটির তথ্য অবশ্য পাথরখণ্ডটির উৎপত্তি চাঁদ থেকে হয়েছে বলেই বেশি সমর্থন করে। তা ছাড়া কামোওয়ালেওয়া একা নয়। পৃথিবীর কাছাকাছি একই ধরনের আরও তিনটি বস্তুর কক্ষপথ কামোওয়ালেওয়ার মতোই। হতে পারে সবগুলোর উৎপত্তি একই ধরনের ঘটনা থেকে। তবে সে কথা নিশ্চিত করে বলার মতো যথেষ্ট প্রমাণ এখনো আমাদের হাতে নেই।

যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটির জ্যোতির্বিজ্ঞানী পল বার্ন বলেছেন, নিশ্চিত হওয়ার একমাত্র উপায় হলো নভোযান পাঠানো। এদিকে চীনের মহাকাশ গবেষণা সংস্থার পাঠানো একটি নভোযান অভিযান শেষ করে পৃথিবীর দিকে ফিরতি পথে পাথরখণ্ডটিতে অবতরণ করার পরিকল্পনা করছে। সেটা এই দশকের শেষ দিকে। সে পর্যন্ত আমরা ধরে নিতে পারি সেটি চাঁদের টুকরা। অন্তত সে সম্ভাবনাই এখন আমাদের হাতে আছে।

তথ্যসূত্রঃ প্রথম আলো। 

No comments

Theme images by luoman. Powered by Blogger.