লাল রঙ কেন ষাঁড়ের শত্রু ?

লাল রঙ কেন ষাঁড়ের শত্রু ?


প্রতিষ্ঠাতা এবং সিইও 

                  Smarter Teaching for All        



সত্যিই কি ষাঁড় লাল কাপড় অপছন্দ করে? তাই লাল রঙ ষাঁড়ের শত্রু। নাকি অন্য কোন রহস্য আছে? এটাই আমাদের জানার বিষয়। 


আচ্ছা চলে আসি মূল কথায়। 


সময়টা ১২ টা বা তার একটু বেশী। বিশাল এক খেলার মাঠ। লাখ লাখ মানুষের উৎসুক চোখ। সবাই এসেছে ষাঁড়ের লড়াই দেখতে। তীর্থের কাকের মতো সবাই বসে আছে। কখন একজন খেলোয়াড় চকমকে পোষাক পরে হাতে একটা লাল চাদর আর একটা লম্বা ছোঁড়ার মত অস্ত্র নিয়ে দাঁড়াতে আসবে আর সেই ঘেরা জায়গার এক দরজা দিয়ে এক বিশাল আকারের ষাঁড় খোলা স্থানে এসে একা দাঁড়াবে। খেলোয়াড় ষাঁড়ের সামনে লাল চাদরটি দু’হাতে মেলে ধরে দোলাতে থাকবে তখনই ক্ষিপ্ত ষাঁড় এসে খেলোয়াড়কে আঘাত করবে। বিপুল জনতা একসাথে করতালি দিয়ে উঠবে। এখন এই ক্ষিপ্ত ষাঁড়ের হাত থেকে খেলোয়াড় নিজেকে কিভাবে বাঁচাবে তাই যেন দেখার বিষয় ! 


ছবিঃ- The Telegraph

আমার তো মনে হয় সবাই বুজতে পারছো এই খেলার নাম কি? 

হ্যাঁ এই খেলার নাম হলো Bull Fighting বা ষাঁড়ের লড়াই। স্পেনে এই খেলাটি খুবই জনপ্রিয়। সাধারণত ষাঁড়ের লড়াই দেখে মানুষের মনে এই ধারণার জন্ম হয় যে ষাঁড়েরা লাল রং অপছন্দ করে, তা না হলে কেন লাল রঙ দেখা মাত্র রেগে গিয়ে লাল কাপড়কে আক্রমন করে? 



 

তাই কোরবানি গরু কিনতে গেলেও আমরা লাল রঙ থেকে বিরত থাকি। লাল জামা পড়ে যাই না। কারণ যদি ষাঁড় তেড়ে আসে তাহলে কেল্লা ফতে। জান নিয়ে টানাটানি শুরু হয়ে যাবে। বেচারা লাল রঙ! যদি লাল রঙ কখনো কথা বলতে পারতো তাহলে সে নিশ্চয়ই ষাঁড়কে বলত,


 “ ভাই কেন আমার উপর তোমার এত রাগ? আমি তোমারে কি এমন করছি?”


কিন্তু বেচারা লাল রঙ তো কথা বলতে পারে না। তাই তার আর এ কথা বলা হয়ে উঠে না। তাহলে লাল রঙ এর প্রশ্নের উত্তরটা কি হবে ?


লাল রঙ এর উপর ষাঁড়ের রাগের কারণটা কিন্তু খুবই অদ্ভুত। স্পেনের ষাঁড়ের লড়াই এর সময় ম্যাটাডোর (Matador) লাল কাপড় নাড়িয়ে ষাঁড়কে রাগিয়ে তোলে আর এই রাগের কারণ আসলে কি? 


উত্তরটা হলো ষাঁড়ের বর্নান্ধতা। বর্ণান্ধকে ইংরেজিতে “কালার ব্লাইন্ডনেস” বলা হয়। 


 আচ্ছা বর্নান্ধতা এই বিষয়টা কি আমরা জানি? বর্ণান্ধ কাদের বলা হয়? 

বর্ণান্ধ তাদের বলা হয় যারা  মূলত মৌলিক রঙগুলো দেখতে পায় না। মৌলিক রঙ বলতে বুঝানো হয় লাল, নীল ও সবুজ রঙকে। মানুষের মধ্যেও কিন্তু অনেকের এই রোগটি হয়ে থাকে। নিশ্চয়ই এখন তোমাদের মনে একটি প্রশ্ন জাগছে। আমি যে বর্ণান্ধ নই তা আমি কিভাবে বুজব?  


তাই তোমাদের জন্য একটি ছবি আমি দিয়ে দিলাম। এটি লাল-সবুজ বর্ণান্ধতা নির্ণয়ের জন্য ব্যবহার করা ইশিহারা (Ishihara) চার্ট থেকে নেওয়া একটি ছবি। 


এই ছবিটি এমনভাবে নকশা করা হয়েছে যে একজন কালার ব্লাইন্ড মানুষ এখানে 21 সংখ্যাটি দেখবে, যেখানে সুস্থ ব্যাক্তি দেখবে 74!

আচ্ছা এবার মূল কথায় চলে আসা যাক। সত্যি কথাটা হল ষাঁড় লাল রং দেখতেই পায় না। ষাঁড় আসলে বর্নান্ধ (Colour Blind )। লাল রং কি, সেটা হয়তো ষাঁড় বেচারা জানেনই না! কি খুব অবাক হলে। 


শুধু লাল নয় এরা কোন রঙ দেখতে পায় না। তবে অনেক সময়েই আমরা দেখি যে লাল রঙ দেখে ষাঁড় রেগে গিয়ে গুঁতো মারতে আসে, এটা আসলে রঙ দেখে না, রঙিন কাপড়ের উজ্জ্বলতা দেখে। ষাঁড়রা যে লাল রং দেখতে পারে না তা জানার জন্য নানা ধরনের পরীক্ষা করা হয়েছে। লাল রঙ ছাড়া অন্য রঙের চাদর ব্যবহার করে দেখা গেছে যে রং দেখে নয়, পর্দার বা কাপড়ের নড়াচড়া দেখেই ষাঁড় উত্তেজিত হয়ে ওঠে। কি মজার কথা তাই না? 


লাল রঙ অন্যান্য রঙের চেয়ে খানিকটা উজ্জ্বল। যখন ষাঁড়ের লড়াই এর সময়  খেলোয়াড় লাল কাপড় নাড়ায় তখন কাপড়ের উজ্জ্বলতা ও নাড়ানোর ভঙ্গি ষাঁড়কে রাগিয়ে তোলে, আর  তাই ষাঁড় আসলে লাল রঙ দেখে নয়, কাপড় নাড়ানোর ভঙ্গি দেখেই রেগে ওঠে। রাগান্বিত হয়ে ছুটতে থাকে খেলোয়াড়ের দিকে, তাকে আক্রমণ করাই থাকে ষাঁড়ের একমাত্র লক্ষ্য।


খেলোয়াড়ের হাতেও অস্ত্র থাকে যা দিয়ে সে আত্মরক্ষা করার চেষ্টা করে আর আক্রমনও করে। অস্ত্র দিয়ে ষাঁড়কে কাবু করতে চায়। এভাবে চলতে চলতে একসময় প্রানীটি আঘাতও পায় আর ক্লান্ত হয়ে পড়ে এবং অবশেষে মারা যায়। এই যুদ্ধে একজনকে মরতেই হয়, আর শক্তিমান অল্প বুদ্ধির প্রাণী যে কিনা সশস্ত্র ও বুদ্ধিমান মানুষের কাছে হেরে অবশেষে মৃত্যুবরণ করে। আহ্ কি করুণ পরিণতি। 


তবে এ সব কিছুর শেষে আমরা একটা নতুন জিনিস জানতে পারলাম। সেটা হলো ষাঁড় একটি বর্ণান্ধ প্রাণী। 


তোমাদের সকলকে অসংখ্য ধন্যবাদ লেখাটা সম্পূর্ন পড়ার জন্য। 

খোদা হাফেজ। 



1 comment:

  1. অনেক কিছু জানতে পারলাম

    ReplyDelete

Theme images by luoman. Powered by Blogger.