প্রথমবারের মতো তোলা হলো ব্ল্যাক হোলের ছবি। ব্ল্যাক হোলটি M87 গ্যালাক্সির কেন্দ্রে অবস্থিত।

প্রথম বার তোলা ব্ল্যাক হোলের ছবি। ছবিঃ ইভেন্ট হরাইজন টেলিস্কোপ।

ছবিটি একটি ব্ল্যাক হোলের। এই ব্ল্যাক হোলটির অবস্থান M87 গ্যালাক্সির কেন্দ্রে। এই ছবিটি ২০১৯ সালের এপ্রিল মাসের ১০ তারিখে প্রকাশ করা হয়।


এই গ্যালাক্সির দূরত্ব পৃথিবী হতে ৫.৩ কোটি আলোকবর্ষ। এত দূরে থাকা একটা জিনিসের ছবি তোলা কথাতো কেউ প্রথমে ভাবতেই পারেনি।


ব্ল্যাক হোলের ছবি তোলার স্বপ্নদ্রষ্টা নেদারল্যান্ডের র‌্যাডবাউড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক হেইনো ফ্যালকে। এই ধারনা তাঁর মাথায় আসে ১৯৯৩ সালে যখন তিনি পিএইচডি গবেষক ছিলেন। সেই সময় ব্ল্যাক হোলের ছবি তোলা সম্ভব এমনটি কেউ ভাবেননি। কারও মনে হয় নি যে এটি সম্ভব। তিনিই সর্বপ্রথম উপলব্ধি করেন ব্লাক হোলের নিকটবর্তী অঞ্চল হতে কিছু রেডিও বিকিরণ নির্গত হয় যা পৃথিবী হতে টেলিস্কোপের মাধ্যমে সনাক্ত করার জন্য যথেষ্ট। তাছাড়া ১৯৭৩ সালে প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে তিনি দেখতে পান তীব্র মাধ্যাকর্ষণ বলের কারণে ব্ল্যাক হোল তার প্রকৃত আকারের চেয়ে আড়াইগুণ বড় দেখায়! তার মানে বুঝতে পারছো।



এই দুটি বিষয়কে মাথায় রেখে প্রফেসর ফ্যালকে ব্ল্যাক হোল সনাক্ত করার ব্যাপারে আশাবাদী হয়ে ওঠেন। ২০ বছর ধরে নানাবিধ যুক্তি-তর্ক, ব্যাখ্যা উপস্থাপন শেষে অবশেষে তিনি ইউরোপীয় রিসার্চ কাউন্সিলকে ব্ল্যাক হোল সনাক্তের জন্য অর্থ বরাদ্দ জন্য রাজী করাতে সক্ষম হন। তথ্যসূত্রঃ বিজ্ঞান পত্রিকা।

শুরু হয় ব্ল্যাক হোলের ছবি তোলার প্রথম যাত্রা। এরপর এশিয়ার বিভিন্ন বিজ্ঞান ফাউন্ডেশন এবং এজেন্সীও এতে যোগ দেয়। এর সর্বমোট বরাদ্দ পৌঁছায় ৪০ মিলিয়ন পাউন্ডে! টাকায় বর্তমানে ৪,৬৩৬,১৬০,৯৬০.০০ টাকা!


একক কোনো টেলিস্কোপ ব্ল্যাক হোলের ছবি তোলার জন্য যথেষ্ট ছিলো না। তাই হার্ভার্ড-স্মিথসোনিয়ান সেন্টার অব এস্ট্রোফিজিক্সের অধ্যাপক শেফার্ড ডোয়েলম্যান এর নেতৃত্বে পৃথিবীর ৭ টি মহাদেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে থাকা আটটি রেডিও টেলিস্কোপ বব্যহার করার পরিকল্পনা করা হয়। এই সব রেডিও টেলিস্কোপ একই সাথে একই দিকে ফোকাস করে ছবি তোলা হলে তার ভেতর থেকে একটা সূক্ষ্ম ছবি বের করে নিয়ে আসা সম্ভব। বায়ুদূষণ এড়াতে এই টেলিস্কোপগুলো ভূ-পৃষ্ঠ থেকে উঁচু স্থানে, পর্বত শীর্ষে স্থাপন করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে হাওয়াই ও মেক্সিকোর আগ্নেয়গিরি, অ্যারিজোনার পর্বতমালা, স্পেনের সিয়েরা নেভাদা, চিলির অ্যাটাকামা মরুভূমি এবং এ্যান্টার্কটিকা। এই সম্মিলিত টেলিস্কোপের নাম দেওয়া হয়েছে ইভেন্ট হরাইজন টেলিস্কোপ। সংক্ষেপে ইএইচটি (EHT).


এবার একটা মজার তথ্য দেই।

ব্ল্যাকহোলটি ৪ হাজার কোটি কিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত এবং আমাদের পৃথিবী থেকে ৩০ লক্ষ গুন বড়!


যাই হোক সবকিছুর বন্ধোবস্ত করার পর ২০১৭ সাল থেকে শুরু হয় গবেষণা। প্রায় দীর্ঘ দুই বছর ধরে এই ছবিটি তোলার জন্য টেলিস্কোপগুলো M87 গ্যালাক্সির দিকে তাক করে জুম করা হয়। এতেই শেষ নয় দরকার ছিল একটি চমৎকার আবহাওয়ার। তাও ভিন্ন ভিন্ন মহাদেশের সব জায়গায় একই সময় চমৎকার আবহাওয়া পাওয়া গেলে একই সাথে ছবি তোলা সম্ভব। ২০১৯ সালের এপ্রিল মাসের ১ম সপ্তাহে চলে এলো সে সুযোগ। সব কয়টি টেলিস্কোপ একসাথে ছবি তোলা শুরু করলো। টানা চার দিন ধরে তোলা হলো এ ছবি। মোট ডাটার পরিমাণ হলো ৫ পেটা বাইট! (1 পেটা বাইট = 5×1015 বাইট), সবগুলো হার্ডড্রাইভের ওজন অর্ধেক টন! এত ডাটা ইন্টারনেট দিয়ে পাঠানো সম্ভব না, তাই প্লেনে উড়িয়ে একসাথে করা হলো। সেখানে কম্পিউটার বিজ্ঞানীরা নূতন ধরনের একটা এলগরিদম বব্যহার করে সেই ডাটা গুলো জুড়ে দিলেন! প্রথম বারের মতো পাওয়া গেলো ব্ল্যাক হোলের একটা ছবি। এই মিশনে প্রায় ২০০ জন বিজ্ঞানী, ইঞ্জিনিয়ার আর গবেষক কাজ করেন।


লেখকঃ

মোঃ তাওহীদুল ইসলাম

প্রতিষ্ঠাতা এবং সিইও

স্মার্টার টিচিং ফর অল।




No comments

Theme images by luoman. Powered by Blogger.